“সত্যি কি আমি একটা সমাজ সেবক ?”
আজ অনেক দিন হল কিছু লিখিনি, কিছু ভাবতেও সময় বের করিনি, আমিও একটু স্বাদ নেবার চেষ্টা করছিলাম যে কাজ না করে কিভাবে থাকা যাই । আজ আর থাকতে পারলাম না। সেই তো সূর্যটা যদি এটা ভেবে বসে যে আমি রোজ তো আলো দিই আজকে একটু বিশ্রাম করবো তাহলে কি হতে পারে সেটাও তো ভাবলাম । তাই আজকে আর বসে থাকা রইল না ।
আজকেই সূর্যটা কেমন উজ্জ্বল হয়ে আকাশের কোলে ভাসছে, প্রতিদিন এর মতো চার দিক আলোই ভরিয়ে দিয়েছে, আর আজও গাছপালা – জীব সমূহ সবাই নিজের জীবনে সব কিছু মানিয়ে চলছে । যাই হোক, আসল কথাটা বলা যাক...
মানুষ একটা আশ্চর্য জীব, যেখানে হাত রাখে সেখানে ধ্বংস ছাড়া কিছু আর অপেক্ষা করা মূর্খতা ছাড়া কিছু নয় । শিক্ষার মাধ্যমে শুধু উন্নয়ন করেনি জীবনটাকে একটা অধিকতম জটিল রূপ প্রদান ও দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং এই প্রক্রিয়া বর্তমানেও অব্যাহত । শিক্ষার দ্বারা মানুষ শুধু ভালো কাজ করেছে তা মোটেই নয় , মিথ্যা বলা, ঠকানো, সমস্ত কাজ যেটা অন্য জনের ক্ষতি হয় সেই কাজ গুলোও খুব ভালো ভাবেই শিখেছে, মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য শুধু লড়াই করেনি সমস্ত কিছুকে নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করে নষ্ট করেছে, নিজেকে বাঁচানোর স্বার্থে যেমন অনেক কিছু বানিয়েছে তেমনি সবকিছু কে ধ্বংস করার প্রস্তুতিও করে ফেলেছে । অনেক বললাম, এখন একটু অন্য কথা বলা যাক...
মানুষ একটা আশ্চর্য জীব, যেখানে হাত রাখে সেখানে ধ্বংস ছাড়া কিছু আর অপেক্ষা করা মূর্খতা ছাড়া কিছু নয় । শিক্ষার মাধ্যমে শুধু উন্নয়ন করেনি জীবনটাকে একটা অধিকতম জটিল রূপ প্রদান ও দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং এই প্রক্রিয়া বর্তমানেও অব্যাহত । শিক্ষার দ্বারা মানুষ শুধু ভালো কাজ করেছে তা মোটেই নয় , মিথ্যা বলা, ঠকানো, সমস্ত কাজ যেটা অন্য জনের ক্ষতি হয় সেই কাজ গুলোও খুব ভালো ভাবেই শিখেছে, মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য শুধু লড়াই করেনি সমস্ত কিছুকে নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করে নষ্ট করেছে, নিজেকে বাঁচানোর স্বার্থে যেমন অনেক কিছু বানিয়েছে তেমনি সবকিছু কে ধ্বংস করার প্রস্তুতিও করে ফেলেছে । অনেক বললাম, এখন একটু অন্য কথা বলা যাক...
শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না, গত ২৫ বছর থেকে কখনো ভাবিনি যে আমাদের এই রকম সময় দেখতে হবে যেখানে ভালো শিক্ষার জন্য লড়াই করতে এগিয়ে আসতে হবে । শিক্ষার উদ্দেশ্যকে কখনো জানতে চাইনি, কারন আমার দরকার পড়েনি । এখন আমি একজন স্নাতক, স্নতাকত্তর এবং বি এড ধারী শিক্ষক । অনেক নাম করা জায়গা থেকে আমার শিক্ষা অর্জন, এটা আমার অহঙ্কার । কিন্তু বাস্তবিক ভাবে ভেবে দেখলে আমি কিছুই জানিনা, আমার শুধু অহঙ্কার, অনেক সুনাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার শিক্ষা লাভ, আমি তো সবকিছুই জানি । শিক্ষা কি শুধু ভালো চাকরী পেয়ে যাওয়া ? নাকি ভালো টাকা উপার্জন করে পরিবারকে সুখে রাখা ? নাকি সমাজের বড় স্থান পেয়ে যাওয়া ? শিক্ষাকে এক কথাই বলতে পারা সম্ভব না ।
আমার একটা বড় অসুবিধে সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কি ? সেটা হল আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া । আমি তো চাকরী পেয়ে গেছি তাই আমার পড়ার দরকার নেই কারন আমি তো সবকিছু জানি, আমার আবার পড়াশুনা কি দরকার । সেই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের তো পড়াই ওদের পড়ানোর জন্য নিজেকে আবার পড়তে হবে এটা তো লজ্জার বিষয় । আর আমি তো সমাজের অনেক দামী ও সম্মানীয় ব্যাক্তি, আমার ইজ্জত আছে তাহলে আমি কিসের জন্য লজ্জার শিকার হব ? (মান-মর্যাদা, সম্মান, ইজ্জত, শিক্ষাদীক্ষা, বিকাশ সবকিছুই প্রতারণা ও স্বার্থ; আমার অস্তিত্ব তাই খ্যাতি,জনরব । যখন অনুপস্থিতি তখনই অপ্রত্যক্ষ বিলোল কুণ্ঠা, স্বার্থের জন্য অসম্ভ্রান্ত ।)
আসল কথাটা হল যে আমাদের এখানে একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েগেছে, সেটা হল চাকরী পেয়ে গেছি আর কিছু দরকার নেই। আমি যে ভাবে সিখে এসেছি সেই ভাবেই আমি আমার শিক্ষাকে ছাত্রের মাথাই ঢোকাবো । আসলে আমি একটা সুন্দর, নম্র, ব্যাবস্থা পেয়ে গেছি যেখানে আমাকে কোন রকম জবাব দিতে হইনা, যেখানে ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করতে হইনা, দেশকে নিয়ে ভাবতে দরকার পড়েনা, সমাজের প্রতি কোন রকম নিষ্ঠা দেখাতে হইনা , সবকিছুই আমি আরাম করে ভোগ করি ।
আমি একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা কোন ব্যবসা না মহাশয়, আমি যদি শিক্ষার আধিকার আইন ২০০৯, রাষ্ট্রীয় পাঠ্যক্রমের রূপরেখা ২০০৫, ভারতীয় শিক্ষার অন্যান্য পরিবর্তন সম্পর্কে যদি আমি না জানি তাহলে আমি কেমন শিক্ষক ? আমার কি সত্যি একজন শিক্ষক বলে পরিচয় দেওয়ার আধিকার আছে ? তাহলে আমি কি ধরনের শিক্ষা প্রদান করি? আমি কি সত্যি শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ? গরমের ছুটিকে নিজের অধিকার বলে খুব আনন্দ ভোগ করি কিন্তু বিদ্যালয়ে আমি প্রতিদিন কি করি, কতটা আমার বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের জন্য ভাবি সেটা কি কখনও ভাবি ? ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী নিজেকে আধুনিক সময়ের সাথে মিলিয়ে চলতে থাকেন কিন্তু আমার নিজেকে বদলাতে এত কেন দেরি ? কেন আমাদের ছেলেমেয়ে বেসরকারী বিদ্যালয়ে যাই, তার মানে আমাদের কাজে সত্যি কি ধারাবাহিকতায় বিচ্ছেদ রয়েছে ?
আমাকে যদি আপনি দুই মাস চাকরী করতে বলেন বিনা মাসিক বেতন এর বিনিময়ে তাহলে কিন্তু আমি তা করতে পারবনা । কারন আমি তো মাসিক বেতনের বিনিময়ে নিজের শ্রম বিক্রি করি, আমি কোন রকমের সমাজের সেবা করিনা । আমি শিক্ষার উদ্দেশ্য জানিনা, শিক্ষার নতুন বিধি সম্পর্কে কোন ধারনা নেই আছে শুধু একটা খেয়াল সেটা হল আমাকে সেই লাল, হলুদ রং-বেরং এর বইটা বছরের শেষে পূর্ণ করতে হবে । আমি জানি বছরশেষে আমাকে পরীক্ষা নিয়ে কিছুকে ভালো শতাংশ মার্ক্স দিয়ে উত্তীর্ণ করতে হবে । কিন্তু দুঃখ আমার, আমি এখনো যে জানিনা কেনইবা পরীক্ষা বিধি লাগিয়ে যাচাই করলাম সেই কোমলটাকে ?
এই হল বর্তমান শিক্ষক সমাজের ছোট পরিচয়, সবাই যে একই রকম তা আমি মোটেই বলিনি, বেশীরভাগ অংশটাই এই রকম । আমারা যদি নিজেকে প্রশ্ন করি তাহলে খুব সহজেই উত্তর খুজে পেয়ে যাবো । আমরা সমাজ সেবক নামে পরিচিত, আমরাই তো সমাজ সৃষ্টি করি কিন্তু যদি বর্তমান সমাজের দিকে তাকাই তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পেরে যাবো কন সমাজ আমরা বানিয়েছি । বাল্যকালে দেখেছি শিক্ষকদের সমাজে সবথেকে উপরের সম্মানজনক আসনে বসিয়ে রাখতো সমাজবাসি কিন্তু আজ সেই দৃশ্য দুর্লভ, কেন এই সময় আসলো ? কে এই সময়ের জন্য দায়ী ? আমাদের পরিবারকে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে ফেলেছি, নিজেকে সমাজের থেকে আলাদা করে ফেলেছি, নিজের ধারাবাহিকতাকে বিছিন্ন করে দিয়েছি। এটাই কি আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ? এটা কি সত্যি সমাজ সেবা ? যদি হ্যাঁ তাহলে কন ধরনের সমাজ এর কথা আমরা ভেবে রেখেছি ? আর যদি না তাহলে এটা কি ? এটাই আমার আমাকে প্রশ্ন “সত্যি কি আমি একটা সমাজ সেবক?”
আমিও পারবো একজন সেবক হতে, আমি একটা সুসমাজের পরিকল্পনা করতে পারবো, আমার সেই বিলুপ্ত প্রায় খ্যাতি বাঁচাতে পারি যদি আমি চাই । আমি সমাজকে তৈরি করতে পারি যদি আমি প্রতিজ্ঞা করি । আমি শিক্ষাকে নতুন দিক দেখাতে পারি যদি আমি প্রচেষ্টা করি । আমার বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েকে আমিও সমাজের জন্য প্রস্তুত করতে পারি যদি তাঁদের চোখে নিজস্ব পরিবারের ছবি দেখি । আজকের দিনে কাজ পাওয়াটা যত সহজ তার থেকে বেশি কঠিন সেই কাজটা দায়িত্ব সহকারে সম্পূর্ণ করা । শিক্ষক সমাজ একত্রিত হয়ে সেই অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করতে সক্ষম, একজন সেবক হয়ে সমাজের চোখে পার্থিব জীবনের পরেও বেঁচে থাকতে সক্ষম ।
******* ধন্যবাদ *******