Saturday, April 14, 2018

তোমার শিক্ষক আমাকে বেশি ভালবাসেন...

হইত তুমি অনেক দিন থেকে তোমার শিক্ষকের কাছে আছো, হইত তুমি ১০-১২ বছর ধরে রয়েছো কিন্তু “তোমার শিক্ষক আমাকে বেশি ভালবাসেন”। আমি মাত্র কয়েক সপ্তাহ থেকে আছি উনার মনে প্রানে, আমাকে বুকে জড়িয়ে, খুব আদর করে, ঠাণ্ডা জায়গায় লুকিয়ে রাখেন, কারন আমি তো খুব প্রিয়। তুমি হইত বুঝতে পারনি, কেনই বা শিক্ষক মহাশয় তোমার দিকে নজর রাখেন না? তুমি এটাও ধরতে পারনি, যে কেন তোমার আপন শিক্ষক সময়ই দেন না? উফ... ছাড়ো। আমি আর কিছু বলবো না, কারন আমাকেও খুব খারাপ লাগে তোমার প্রতি এই অবস্থা দেখে। তুমি চোখ চেয়ে বসে থাকো, একটা অন্ধকার কোনে আর আমি থাকি আলোর সাথে। আমি নাকি আঁধার ঘুচিয়ে ফেলি, আমাকে লজ্জা লাগে। কারন, শিক্ষক ভুলে গেছেন যে, আমার এই ক্ষমতার জন্মদাতা তুমি।

সেইদিন আমাকে খুব খারাপ লাগলো, যেদিন আমি একটু আড়াল থেকে বেরনোর সময় একটু আঘাত পেলাম, একটু মাথায় চোট পেলাম কিন্তু তার শাস্তিটাও তো তুমি পেলে, তুমি নাকি কিছু একটা আঁকার পর শিক্ষক মহাশয়কে তাড়াতাড়ি খুশি হয়ে দেখাতে আসছিলে তাই আমি চোট পেলাম। আমাকে উনি এত ভালবাসেন, তাহলে আমাকে চোটই বা কেন লাগবে? তাই শাস্তি তুমি পেলে। দেখো তুমি নিজের জায়গাই থাকো বেশি ভালোবাসার আশা রেখোনা । আমি তো এত আপ্লুত হয়ে যায় উনার ভালোবাসা পেয়ে। কাল আমি একটা পরনের শক্ত এবং খুব সুন্দর পোশাক পেয়েছি। হ্যাঁ, রঙটা কাঁচের মতো কিন্তু ব্র্যান্ডেড। দোকানদার নাকি বলাবলি করছিলেন যে, এই পোশাক পরে হোঁচট খেয়ে পড়লেও নাকি চোট পাবোনা। কি সুন্দর না? পরে জানতে পারলাম আমার পোশাকের জন্য উনি নিজের পোশাকটা এত ভালো কিনতে পারেননি, তাই একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম। তখন আবার আমিও ভাবলাম এতে লজ্জার কি বা আছে? আমি তো উনার জীবনের অংশ তাহলে এটা তো আমার অধিকার।
সেইদিন তুমি লক্ষ্য করোনি হয়তো, মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে অনেকজন আসেন তোমাদের দেখতে, জানতে আর শিক্ষকের ভালোবাসা (তোমাদের প্রতি) দেখতে। তখন কিন্তু আমাকে একটু হিংসে হয়, কেন হবেনা হিংসে তুমি বল? সবার সামনে নকল ভালোবাসা তোমাদের প্রতি আর তোমাদের সাথে, একা সময়ে শুধু আমি আর আমি। এইতো গতকালের ঘটনা, বড় বাবু এসেছিলেন আর আমি অজান্তে উনার সামনে এসে পড়ি, আমি চিৎকার করে বাইরে আসি তখন খুব মিষ্টি সুরে বড়বাবু বললেন, “কি সুন্দর আওয়াজটা, কবে থেকে আপনার কাছে আছে? আমিও তো নিয়ে আছি, আমারটাও বেশ স্মার্ট, সব কাজেই বেটে নেই। যখন যা বলি তা করে ফেলে। দেখে রাখবেন, বাচ্চাদের নজরে না আসে”।
মাঝে মাঝে আমাকে খারাপ লাগে কারণ শ্রেণীকক্ষে ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে নিয়ে উনি ব্যস্ত থাকেন ৩-৪ ঘণ্টা, এটা কি ঠিক? আমার মতে একটু আধটু নিজের কাজে মন দেওয়া ভালো। নাহলে তোমরাই প্রশ্ন করবে যে কেন আমার প্রতি শিক্ষক মহাশয়ের টান? সেইদিন তো মাস্টার মহাশয়ই বললেন যে, তোমারাও নাকি একদিন আমাই খুব ভালবাসবে? এটা কি ঠিক? আগে থেকেই সব নির্ধারণ? তোমরা যখন একটু পড়তে শুরু করো, তখন আমি কিন্তু বেরিয়ে আসি, কখনো একটু দেরিতে নাহলে প্রথম থেকেইতোমাদের তো সাহস শেষ করে দেওয়া হয়েছে, তোমরা তো প্রশ্ন করবেনা কারণ তোমাদের ভয় দেখিয়ে কুপোকাত করা হয়েছে। তোমরা তো স্মার্ট না, তাহলে... তাহলে তোমরা আর ভালোবাসা পাবেনা, পাবো আমি। আমি প্রতিনিয়ত নিজেকে স্মার্ট করি তোমাদের দ্বারা কিন্তু তোমরা? ও হ্যাঁ, কোথাও শুনেছিলাম তোমাদের স্মার্ট করার স্বার্থে সরকার আমার মহাশয়কে লাগানো হয়েছিল ওটাও আবার মাসিক বেতনের সাথে, কিন্তু তোমরা তো ওখানেই, যেখানে ছিলে, আর আমি?

কখনো কখনো মনে হয়, আমি সবকিছুর জন্য দায়ী কিন্তু আমি তো তোমার দ্বারা পরিচালিত, তুমি তো আমার জন্মদাতা, আর আমার মূল্য নির্ধারণকারী , কিন্তু আজ আমার জন্য তোমার মূল্য আমার থেকেও কম, তোমার শিক্ষক আমাকে বেশি ভালবাসেন । গত ১০ বছরে আমি সবার প্রিয়, সবার আপন আর কিছুটা হলেও সমাজের বিনাশে আমার হাত “আমি মোবাইল ফোন...”