Saturday, July 23, 2022

প্রসঙ্গ মিড্-ডে -মিল্

মিড্-ডে-মিল ব্যবস্থার ইতিহাস খুঁজতে হলে আমাদের ১০০ বছর পিছনে ফিরে দেখতে হবে।  রাজ্য হিসেবে আমাদের দেশের অঙ্গরাজ্য তামিলনাড়ু এই ব্যবস্থা শুরু করে ৬০ এর দশকে।  অনেকে আবার বলে থাকেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেও অনেক জায়গায় এই ব্যবস্থা ছিল। যাইহোক, ২০০২ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সারা দেশে এই ব্যবস্থা ৬ মাসের মধ্যে লাগু করার কথা বলা হয়। প্রথমে অনেক রাজ্যে চাল, গম এই সব বন্টন করা হলেও পরে সেটা কুকিং ফর্মে লাগু হয়। এইরকম ইতিহাস ইন্টারনেটে খুব সহজে বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।  আসল কথায় আসছি। ..

মে, ২০১৪ সাল, আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট এর জন্য আসে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি তখন মাস্টার ডিগ্রী ফাইনাল সেমেস্টার। একটা কমন সেশান করা হয় সেখানে সেই সংস্থার কিছু লোক আমাদের সাথে কথা বলেন এবং আহ্বান করেন যে "ইফ ইউ ওয়ান্ট টু কান্ট্রিবিউট ইন গভর্ণমেন্ট এডুকেশন সিস্টেম দেন জয়েন আস, জয়েন আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট।" 

২০১২ তে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড করেছিলাম, তাজা তাজা মনোভাব, সবকিছু বদলানোর প্রবল ইচ্ছা তাই আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের কথা গুলো একদম মনে অনেক সাড়া দেয়। একটা কথা বলে রাখা ভালো, আপনি বি.এড কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করুন বা যেকোনো কলেজ থেকে, প্রফেসর গুলো বেশিরভাগই স্কুলের সত্যিকারের পরিবেশ সম্পর্কে অবগত থাকেন না, আদর্শগত দিক আর থিওরী নিয়ে দিব্বি কাজ চালিয়ে যান। যাইহোক, এই সংস্থায় জয়েন করার জন্য পরীক্ষা দিলাম এবং কয়েকদিন পর জানতে পারি যে সাক্ষাৎকারের জন্য ভূগোল বিষয়ের কয়েকজনকে সিলেক্ট করা হয়েছে। সেই রকমই অন্যান্য বিষয়েও হয়েছিল। আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ একটু আলাদা রকম কারো ৩০ মিনিট তো কারো ১ ঘন্টাও চলে।  ইন্টারভিউ দিয়ে একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।  যারা এই প্রসেস দেখেছে তারাই শুধু এই অনুভব করতে সক্ষম। প্রথম রাউন্ডের ইন্টারভিউ বিষয় সম্বন্ধিত এবং দ্বিতীয় রাউন্ড "পার্সপেক্টিভ অফ এডুকেশন" এর।  দ্বিতীয় রাউন্ডে আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হলেও একটা প্রশ্ন আমার খুব ভালো ভাবে মনে আছে,

"বর্তমানে মিড্ ডে মিল্ ব্যবস্থার উপর আপনার মতামত কি ?" 

আমার উত্তর অনেক নেগেটিভ ছিল, সোজা জানিয়েছিলাম যে এই সিস্টেম তুলে দেওয়া উচিত। কারণ এই ব্যবস্থা স্কুলে একটা খারাপ প্রভাব ফেলছে। তখন  প্রশ্নকর্তা মুচকি হেসে আবার প্রশ্ন করেন, কোন ধরণের খারাপ প্রভাব ? এবং আমি অনেক এদিক ওদিক বলেছিলাম। 

যাইহোক বেশ কয়েকদিন পর জানতে পারি যে আমি সিলেক্ট হয়েছি, লোকেশন দেওয়া হয়েছে রাজস্থান। সংস্থা জয়েন করার ১ বছর পর জানতে পারি মিড্ ডে মিল প্রকৃত মানে এবং জানতে পারি  প্রশ্নকর্তার সেই মুচকি হাসির কারণ। আমাকে কিছু জেদী শিক্ষক-শিক্ষিকা সাহায্য করেছিলেন এই ব্যবস্থাকে জানতে। একজন শিক্ষক 'শঙ্করলাল বুনকার' (প্রধান শিক্ষক, সেকেন্ডারি স্কুল মালিপুরা, রেওদার ব্লক, সিরোহি জেলা) একটা কথা বলেছিলেন যে, "স্যার মিড্ ডে মিল শুধু দুই মুঠো খাবার নয়, মিড্ ডে মিল্ একটা মূল্যবোধ। শিক্ষার আল্টিমেট উদ্দেশ্য হলো, একটা কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক তৈরী করা।  আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ন্যায়, লিবার্টি, ভাতৃত্ববোধ এই সব মূল্যের কথা বলা হয়েছে। আর এই মিড্ ডে মিল ব্যবস্থা আমাদের এই সংবিধানিক মূল্যবোধ তৈরী করে। যখন  ছাত্র ছাত্রী দুই মুঠো খাওয়ার সময় একসাথে বসে তখন একটা সমানতাবোধ, ভাতৃত্ববোধ এই সব গুন্ ফুটে ওঠে।"  শঙ্করলাল স্যার  এই মিড্-ডে-মিল ব্যবস্থার উপর আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের টেকনিক্যাল সাহায্য নিয়ে একটা দারুন ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন যেটা সারা রাজ্যের  (রাজস্থান) অনেক জেলায় ইনসার্ভিস টিচার্স ট্রেনিং এর সময় দেখানো হয়েছিল। সেই সময় উনাকে অনেক আলোচনা শুনতে হয়েছিল কারণ উনার ব্যবস্থাটা সবার ক্ষেত্রে ডিসকম্ফোর্টপ্লেস তৈরী করছিলো। 

সত্যি, আমাদের দেশে অনেক সেই রকম জেদী শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন যারা ছাত্র ছাত্রীদের অধিকারের জন্য নিজের আরামদায়ক কেদারার তোয়াক্কা পর্যন্ত করেন না, ছাত্র ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে নিজ লোকেদের সাথেও লড়াই করতে পিছু হটেন না। এই মিড্-ডে-মিল্ প্রভাব স্কুল ছুট কমানো থেকে, স্কুলের উপস্থিতি সব জায়গায় প্রলক্ষিত। কোবিড-১৯ লকডাউনে এর প্রভাব সবজায়গায় দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। এই অন্যতম ব্যবস্থার সঠিকভাবে মনিটরিং বা উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে অনেক স্কুলে বাধার সম্মুখীন হয়েছে এটাও সত্য। অনেক জায়গায় এই ব্যবস্থাকে সঠিক বললেও অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা একটা চ্যালেঞ্জ বা বাধা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।  আবার অনেক বিদ্যালয়ে এই সামান্য খাবারটুকুও শিক্ষক শিক্ষিকা, এস.এম.সি মেম্বার, শিক্ষা দপ্তরের অফিসার সবার মধ্যে বন্টন হয়ে যায়। 


***

Monday, June 6, 2022

শিক্ষা ব্যবসা আর কোবিড-১৯

সাল ২০১৯, জাতীয় স্তরের খবরের চ্যানেল থেকে খবর ধেয়ে আসছিলো, যে বিশ্বের বেশ কয়েকটা দেশে কোবিড ভাইরাস থাবা বসিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশে তখন লোকসভা ভোট নিয়ে মাতামাতি, যেটা হয়েই থাকে। তারপর জানুয়ারি ২০২০, আমাদের দেশেও অবশেষে ঢুকলো সেই অভিশাপ "কোবিড-১৯", তারপর শুরু হয় তান্ডব। দেশের সমস্ত রকমের ব্যবস্থাকে এক এক করে নগ্ন করতে থাকে এই কোবিড ভাইরাস। জর্জর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নড়বড়ে এবং অভিশপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, রক্তে রাঙানো যাতায়াত ব্যবস্থা, মারণ রাজনীতি, কুসংস্কারে ঢাকা আমাদের চিন্তাধারা, ধর্মের নামে বিদ্বেষ, সবকিছুই আয়নার মতো আমাদের সামনে আসতে থাকে।

২০২০ এর শেষের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা ব্যবস্থা (ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা) যেমন ধীরে ধীরে সম্পন্ন ব্যক্তিদের কম্পিউটার এর ভিতরে প্রবেশ করলে লাগলো ঠিক সেই সময় গরিবদের হাত থেকে বেরিয়ার যাওয়ার মতো অবস্থা আর মধ্যবিত্তের জন্য এটা হয়ে উঠলো "মোবাইল বেসড" শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠলো "অনলাইন", একটি ইংরেজি শব্দ, সবাই শিখলো। আসলে কি জানেন, এটা কোনো ব্যবস্থার শ্রেণীতেই পড়েনা কারণ, বেশির ভাগ (৫০% এর বেশি) দুই মুঠো খাবারের জন্য লড়াই করছে আর ১০-২০% এর জন্য একটা রোগা জীর্ণ, অর্ধ-নগ্ন ব্যবস্থা বানিয়ে বলে দেওয়া হলো যে "ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা এখন দ্রুততার সাথে অনলাইন হয়ে যাচ্ছে, ছেলে মেয়েরা আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করছে।"
ঝাড়খণ্ডের এক আদিবাসী, হয়তো শিক্ষা টিক্ষা বোঝেন না কিন্তু উনি আমাকে মনে করালেন এবং বললেন "দেখুন এই সব শিক্ষা আপনাদের হতে পারে, আমাদের ছেলে মেয়ের জন্য নয়। আমার ছেলে / মেয়ে প্রতিদিন এক নোংরা পরিবেশের সম্মূখীন হচ্ছে আর আপনারা এই ব্যবস্থাকে "অনলাইন শিক্ষা" বলছেন ? আমাদের বোকা বানাবেন না, তাহলে এই সব স্কুল এর দেওয়াল গুলো রেখে কি লাভ ? কোথায় পাবো প্রতিদিন ২-৩ জিবি ডাটা শুধু ভিডিও দেখার জন্য? শিক্ষা তো বিনামূল্যে, এই সময় তো আমাদের মাঠে ঘাটে কোনো কাজ নেই তাহলে পাবো কোথায় নতুন মোবাইল কিনে দেওয়ার মতো অর্থ ?
জানেন ব্যাপারটা আসলে কি? গোবিন্দা এবং শক্তি কাপুর অভিনীত এক হিন্দি সিনেমা "জিস দেশমে গাঙ্গা রেহতা হে" যেখানে একটা দৃশ্য দেখানো হয়েছে যে হঠাৎ করে গ্রামের ধুতি পাঞ্জাবি পড়া লোকটাকে যখন সুট প্যান্ট ধারণ করতে বলা হয় তাও আবার অর্ধ নির্দেশ দিয়ে তখন কোনটা সামনের দিক আর কোনটা নিতম্ব ঢাকার অংশ সেটা বুঝতে অনেক অসুবিধা হয়ে যায়। বাকিটা বুঝতেই পারছেন...!!!
সরকারি তথ্য অনুসারে আমাদের দেশে ২৬০ মিলিয়ন মানে ২৬ কোটি ছাত্র ছাত্রী, ১৫ লক্ষের বেশি বিদ্যালয় এবং ১ কোটির বেশি শিক্ষক শিক্ষিকা এর এই তথ্যের ৯০% লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য, শিক্ষা পাওয়ার জন্য। বিপরীত দিকে এক বিশাল সাম্রাজ্য তৈরির পথে সমস্ত ডিজিট্যাল শিক্ষা দেওয়ার ঠিকাদার। প্রতিটা ঘরে ঘরে আমাদের সিনেমা জগতের স্টার বার বার এসে আমার আপনার মাথায় ঢোকাতে ব্যস্ত, 'যে আপনার ছেলে মেয়ের ভবিষৎ আমাদের হাতে দিয়ে দিন।' এমন এক ব্যবসা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় যেটাকে শিক্ষা ব্যবসা বলা যেতে পারে। এই এডটেক কোম্পানি গুলোর ২০১৯ সালে মোট রেভিনিউ ছিল মোটামুটি ৪০০০ কোটি টাকা, এবং ২০২০ সালে এটা এসে দাঁড়ায় মোটামুটি ৩৫,০০০ কোটি টাকায়। ২০২১ সালে এই সংখ্যা আকাশ ছোঁয়ার দিকে মোটামুটি ৫০,০০০ কোটি টাকা। মনে রাখা ভালো এই সময় সমাজের এক বৃহৎ শ্রেণী ২ বেলা খাবারের জন্য সরকারি দপ্তরের উপর তখন নির্ভরশীল। অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেন যে, এই রেভিনিউ ২০২৫ সালে ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।
চারদিকে হাহাকার, সব কিছু ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের জন্য খুললেও স্কুল অনেক পরে খোলা হয়েছিল আর এইভাবেই আমরা বিশ্বের তিন নম্বর সর্বাধিক স্কুল বন্দ রাখার দেশের শ্রেণীতে নাম তুলে ফেললাম। ধীরে ধীরে সরকারী বিদ্যালয় এবং অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়ায়ে লড়ে যাওয়া প্রাইভেট স্কুল গুলো যখন উন্মুক্ত হতে থাকে তখন কিন্তু টেলিভিশন গুলোতে এই "এডটেক" বা "ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবসার" বিজ্ঞাপন অনেক বাড়তে থাকে।
"ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবসার মালিকদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু হয়। এই সময় চারদিক থেকে অনেক অভিযোগ আসতে থাকে যে শিক্ষার নামে প্রতারণা, অটো ডেবিট সিস্টেমের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের পকেটে ছুরি মারা আরো অনেক ধরণের অভিযোগ।
এখন ক্লাসরুম শিক্ষা ব্যবস্থা আবার নিজ ছন্দে। "ধারাবাহিক শিক্ষা" আর "এডটেক শিক্ষা ব্যবসার" মধ্যে বর্তমান ঠান্ডা যুদ্ধ। ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, আর অর্থিনীবিদরা আবার নতুন করে আর্থিক রেভিন্যুইয়ের অংকে ব্যস্ত।

ফাইল ফটো



Monday, May 23, 2022

শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্দশার জন্য শিক্ষক সমূহ দায়ী নয়...

ভারতের অনেক রাজ্যে ভ্রমণ করেছি, জনগণ এবং বিদ্যলয়ের শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে অনেক বার্তালাপ হয়েছে। শতাধিক বিদ্যালয়ে সময় কাটিয়েছি এবং পুরো বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাকে জানার চেষ্টা অনবরত চালিয়ে যাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গ হোক বা কর্ণাটক, রাজস্থান হোক বা মেঘালয়, উত্তরাখন্ড বা ঝাড়খন্ড - সব জায়গায় আমাদের হাত-পা ভাঙা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্দশার জন্য সাধারণতঃ শিক্ষক শিক্ষিকাদের দায়ী করতে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কেন এই দৃশ্য? কিভাবে তৈরী হলো এই দৃশ্য? এই বিষয়ে সবাইকে জানা খুব দরকার। শিক্ষক শিক্ষিকাদের পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়া মানেই সমাজের অধ:পতনের একটা উপসর্গ বলা যেতে পারে। শিক্ষক শিক্ষিকারা শুধু ভারতীয় সমাজেই নয় সারা জগৎ জুড়ে বা এই বিশ্বের জ্ঞানের ভান্ডারের উৎপত্তির মূলে রয়েছেন। সমাজকে একটা শৃঙ্খলের দ্বারা বেঁধে রেখেছেন এবং প্রতিক্ষণ সমাজের উন্নতির স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান স্বাধীন ভারতের, যেকোনো সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার কাজ শিক্ষক শিক্ষিকারা করেছেন।

শিক্ষা ব্যবস্থা একটা বিশাল ব্যবস্থা আর সেই ব্যবস্থার একটা ক্ষুদ্র অংশ হলো শিক্ষক শিক্ষিকা যদিও সংখ্যাটা অনেক বড়ো। ভারতে মোটামুটি ১০ মিলিয়ন মানে ১ কোটি শিক্ষক শিক্ষিকা এই বিশাল ব্যবস্থার সাথে যুক্ত। বর্তমানে সারা ভারত তথা পশিমবঙ্গের প্রাথমিক ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের "লার্নিং আউটকাম" একদম তলানিতে। লার্নিং আউটকাম হলো একটা পরিমাপ যোগ্য বিবৃতি, যেটার দ্বারা বোঝা যায় ছাত্র ছাত্রীরা নির্দিষ্ট একটা কোর্স পড়ার পর কি জানতে পারলো, কি জানা উচিত ছিল এবং তার দ্বারা কোন ধরণের মূল্যবোধ তৈরী হলো। এই লার্নিং আউটকাম থেকে বোঝা যাই সেই রাজ্যের বা জায়গা বিশেষের শিক্ষার গুণগত মান। সম্প্রতি পশিমবঙ্গ সারা ভারতের বড় রাজ্যগুলির প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরের শিশুদের মধ্যে সাক্ষরতার সূচক, 'ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমারেসি ইনডেক্স'-এ মধ্যে তালিকার শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। পশ্চিমবঙ্গ মোট ৫৮.৯ স্কোর অর্জন করেছে এবং জাতীয় গড় ৪৮.৩ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের মোট স্কোর ৫৮.৯ হলেও সেটা অনেক কম স্কোর।
শিক্ষকরা এই জর্জর শিক্ষার জন্য কেন দায়ী নয় সেটা কয়েকটা কারণে বোঝা যেতে পারে।

প্রথমত, শিক্ষার ব্যাপারটা যেভাবে পলিসি লেভেলে তৈরী হয়ে থাকে সেই ভাবে শিক্ষকদের কাছে সঠিক ভাবে পৌঁছানোর পথ বন্ধ, এর জন্য অনেক সময় বি.এড বা ডি.এল.এড বা অন্যান্য প্রাক পরিষেবা ট্রেনিং কোর্সের খারাপ পাঠ্যক্রমকে দায়ী করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের ভৌগলিক বৈচিত্র্য, ভাষাগত বৈচিত্র্য সর্বদা লক্ষণীয় কিন্তু একজন শিক্ষকের জন্য প্রতিটা স্থানীয় ভাষা জানা অনেক দুরহ ব্যাপার। এই অজানা ভাষার জন্য শিক্ষক অনেক কিছু জানা সত্ত্বেও সেটা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষকদের যে বই গুলো পোড়ানোর জন্য সুপারিশ করা করা হয় সেই বইএর ভাষা এবং বাচ্চাদের বাড়িতে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে অনেক তফাৎ। আমি কিন্তু এই বৈচিত্র্যর বিপরীতে নয়, এই বৈচিত্রকে কিভাবে গঠনমূলক ভাবে লাগানো যায় সেটা একটা ভাবার বিষয়।

তৃতীয়ত, একটা ভালো শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ভালো পোড়াবার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত থাকেন যেটাকে আমরা সাধারণত এফেক্টিভ পেডাগোজি বলি কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকা অনেক সময় এই এফেক্টিভ পেডাগোজি না জানার ফল স্বরূপ অনেক জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সেটা বাচ্চাদের কাছে নির্বাহ করা অনেক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

চতুর্থত, বিদ্যালয়ের খারাপ পরিকাঠামোর জন্য শিক্ষক শিক্ষিকারা ডিমোটিভেটেড হয়ে পড়েন কারণ স্কুলে শৌচালয়ের অভাব, প্রাকটিক্যাল ল্যাবের অভাব, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের অভাব, স্বচ্ছ জলের অভাব, পুস্তকালয়ের অভাব।

পঞ্চমত, শিক্ষক শিক্ষিকাদের শিক্ষা মূলক কাজের চেয়ে অন্যান্য কাজের সাথে সিংহভাগ সময় জুড়ে দেওয়া।

ষষ্ঠত, সেলফ গ্রোথ বা পেশায় স্ব-বৃদ্ধি, সময় উপযোগী ট্রেনিং সেই রকম ব্যবস্থা না থাকার ফলে জ্ঞানে নতুনত্তের অভাব। বিদ্যালয় গুলোতে যেধরনের বই বা রিসোর্স থাকে সেটা সময় অনুপযোগী।
সপ্তমত, একই সময়ে আলাদা আলাদা শ্রেণীকক্ষ পরিচালনা করা। সারা ভারতে শিক্ষকের অভাব আর সেই অভাব দূর করার জন্য এক শিক্ষক আলাদা আলাদা শ্রেণীকক্ষ চালানোর জন্য বাধ্য হন। ২০২১ সালে উনেস্কোর দেওয়া রিপোর্ট অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা করুণ অবস্থা তুলে ধরা হয়। পশ্চিমবঙ্গে ১ লক্ষের বেশি শিক্ষকের অভাব, উত্তর প্রদেশে সেই সংখ্যা ৩ লক্ষের অধিক।
শিক্ষণ এবং শেখার প্রক্রিয়া খুবই জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই জটিল প্রক্রিয়ার জন্য দরকার মোটিভেশোন্, ট্রেনিং, সেলফ গ্রোথ, সুরক্ষিত পরিবেশ, বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় সুবিধা, বিদ্যালয় চালানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, নিজ জ্ঞানবর্ধনের জন্য সময় উপযোগী রিসোর্স। ব্যাতিত এই সব একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা নিজেকে যেমন ডেমোটিভেট করে তার সাথে মনে হয় তিনি একজন তাচ্ছিল্য প্রাণী। শিক্ষকদের একটা ছোট সংখ্যা স্ব-অনুপ্রাণিত বা ইতিবাচক এবং একটা ছোট সংখ্যা নেতিবাচক থাকেন কিন্তু মাঝের সংখ্যাটা নিরপেক্ষ বা উদাসীন হয়ে থাকে আর এই সংখ্যাটা বিশাল। আমাদের মনে রাখা দরকার একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা আমাদের সমাজের একজন। টিচিং প্রক্রিয়া একদিনের বা একমাসের বা একবছরের প্রক্রিয়া নয় তাই মনে রাখতে হবে উপরোক্ত সুবিধা ছাড়া হয়তো সুষ্ঠূ ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হবেই।

Wednesday, April 20, 2022

আজ শিক্ষা, শিক্ষা নয় - যেন একটা কাগজ কলমের চিহ্ন মাত্র...

আমাদের দেশে রাজনীতি, ধর্ম, জাতি, ভাষা নিয়ে তৎপরতার শেষ নেই বললেই চলে।  রাজনীতির জন্য লড়াই - হিংসা খুব সাধারণ ব্যাপার, আর আমরা এই পরিবেশে নিজেকে এমন ভাবে দাঁড় করে ফেলেছি যে এতো হিংসা - লড়াই - হানাহানি এই সবকে খুব ছোট ঘটনা এবং স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি।  সমাজের কিছু মানুষ এখনো আছে যাদের কাজ এই ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করা এবং আজ তাদের আমরা খুব খারাপ নজরে দেখতে ভালোবাসি, আর এটাই তো স্বাভাবিক কারণ স্রোতের বিপরীতে চললে যা হয়। রাজনীতি, জাতি, ধর্ম এই সব নিয়ে আমাদের তর্ক বিতর্ক  দেখা গেলেও শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে খুব কমই লক্ষ্য করা যাই।  যা দেখা যাই সেটাকে উল্লেখ করাও হাসির পাত্র।

আমরা সাধারণতঃ বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বা পলিসি ডক্যুমেন্ট থেকে "কোয়ালিটি এডুকেশন" এর কথা বরাবর শুনতে পেয়ে থাকি, কিন্তু এখনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা মুশকিল যে এই "কোয়ালিটি এডুকেশন" এর ব্যাপারটা আসলে কি? কেউ বরাবর এর উত্তর দিতে পারেনি। কোন বিষয়টা আসলে কোয়ালিটি আর কোনটা নয়।  যেভাবে যে পেরেছে সে "কোয়ালিটির" ব্যাপারটা ডিফাইন করার চেষ্টা করেছে। যেমন "শিক্ষার" ব্যাপারটা, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী থেকে এপিজে আব্দুল কালাম, সবাই শিক্ষাকে নিজের মতো করে দেখার চেষ্টা করেছেন আর যে গুলো নিজের জায়গায় খুব যথার্থ।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যেটার ডেফিনেশন দেওয়া সেই "শিক্ষার"এবং "কোয়ালিটি " এই দুটো শব্দের মতোই।  আমার কাছে এই কথা বলার যথার্থ কারণ রয়েছে। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থার নাম যা প্রহসন চলছে সেটাকে ডিফাইন করাও একটা কঠিন কাজ।  প্রতিটা মানুষ আজ শিক্ষাকে নিজের মতো করে ডিফাইন করছে, এবং সেটা নিজের জায়গায় হয়তো ঠিক হতে পারে, আমি প্রধানতঃ তাদের কথা বলছি যারা শিক্ষার ব্যাপারে একটু হলেও মাথা ঘামায়। আমি শিক্ষার ব্যাপারে কেন বলতে চাইছি এর পিছনে অনেক বড়ো রহস্য নেই যা আমি উন্মোচিত করে সবাইকে একটা চমক দিতে চাই।  খুব সাধারণ অর্থে আমরা জানি "শিক্ষা হলো সাফল্যের প্রথম সিঁড়ি", কিংবা বলতে পারি শিক্ষা হলো সমস্ত সম্ভবনার দ্বার।

একটা দেশেরশিক্ষা ব্যবস্থা” নির্ধারণ করে যে এই দেশের উন্নতির আয়ু কত বা দেশ কতটা সমৃদ্ধশালী। শিক্ষা ছাড়া হইতো আজ এই অঙ্কে মাথা লাগানো একটা বৃথা চেষ্টা হবে।  কিন্তু যদি সেই শিক্ষা বা কোয়ালিটি শিক্ষা সাধারণভাবে না হয়েকাগজ কলমে” হয়ে যায় তাহলে সেই দেশের বা সমাজের কি অবস্থা হতে পারে।  আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন আমি ছেড়ে দিলাম।

জাতীয় শিক্ষা নীতি ১৯৮৬/১৯৯২ এবং জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ এই রকম একটা ব্যবস্থার শিকার। জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ এমন একটা ডক্যুমেন্ট যেটা ছাড়া বিদ্যালয়ে বা শ্রেণীকক্ষে যাওয়া এবং শিক্ষন প্রক্রিয়া চালানো সেই রকমই যেটাইউটিউবে” পাঁচ মিনিটে গাড়ি কিভাবে চালাতে হয় ভিডিও ক্লিপ দেখে গাড়ি চালাতে লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমাদের দেশে শিক্ষা বা কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা বললেও কোথাও হয়তো কেউ বলে থাকে কিন্তু "কোয়ালিটি টিচিং"? শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটা জিনিস একে অপরের সাথে জড়িত তার মানে হলো, আমি যদি শিক্ষা বা আক্ষরিক অর্থে ফর্মাল এডুকেশন যেভাবে পাবো সেই ভাবেই কিন্তু ভবিষ্যতে শিক্ষাকে বা সমাজকে বা দেশকে দেখার চেষ্টা করবো। সাধারণতঃ এই জিনিসটাই লক্ষণীয়।

নতুন শিক্ষা নীতি ১৯৮৬/১৯৯২ এবং জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ যেভাবে তৈরি হয়েছিল সেটা সেই সময় উপযুক্ত একটা গম্ভীর পলিসি ছিল এবং আজকের জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ সেই পলিসির উপর নির্ভর করে একটা নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে।  যাই হোক, সেই সময়ে একটা সময়পোযোগী শিক্ষা নীতি বানানো হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাই যে দেশ যে স্বপ্ন নিয়ে চলেছিল সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি।  কারণ, কোনো এক দার্শনিক বলেছেন যে স্বপ্ন দেখো কিন্তু তারজন্য সমস্ত শক্তি লাগাতে হবে তাহলেই হয়তো স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।  কিন্তু যদি এই রকম হয় স্বপ্ন দেখবো কিন্তু চেষ্টা করবোনা এবং সেটা পূর্ণও হয়ে যাবে সেটা তো সম্ভব নয়।  জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ হলো সেই একটা স্বপ্ন, স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম কিন্তু যে শক্তির দরকার ছিল সেটা হয়তো আমরা দিতে পারিনি যতটা দেওয়ার দরকার ছিল।  "জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫" কাগজ কলমে অদ্বিতীয় একটা খসড়া ছিল কিন্তু সেটা শিক্ষা ব্যবস্থার নিম্ন সিঁড়ি বা হয়তো বলতে পারেন শিক্ষা ব্যবস্থার আসল কারিগরের কাছে ঠিক ভাবে পৌঁছায়নি। আর এর জন্য শিক্ষকরা দায়ী নয়।

শিক্ষা ব্যবস্থা আজ "কাগজ কলমে" যেমনটা জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা ২০০৫ ছিল। শিক্ষা যার জন্য তার কাছে এখনো ঠিক ভাবে বা বলতে পারি কোয়ালিটেটিভলি শিক্ষা এখনো শ্রেণী কক্ষে পৌঁছায়নি। বর্তমানে অনেক সমস্যায় জর্জরিত আমাদের সমাজ, দেশ তার সমাধানে সবাই  ব্যস্ত, সবাই আসল পথ খোঁজার পথে বড়ো বড়ো রিসার্চ কিন্তু সমাধান যে ঐ বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে রয়েছে এইদিকে খেয়াল নেই।  কোলাইটি এডুকেশন হলো একমাত্র রাস্তা যেটা আমাদের সমাজের সমস্যা দূর করতে পারে। কিন্তু যদি সেই কোয়ালিটি এডুকেশন কাগজ কলমে থেকে যায় তাহলে হয়তো দেশের বা সমাজের এই প্রকার সমস্যা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে বা হয়তো সমস্যা আমাদের আরো জটিলভাবে জড়িয়ে ধরবে।

জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০, তিন দশক পর একটা ডক্যুমেন্ট যা এই সব সমস্যার মধ্যেই উপস্থিত, একটা স্বপ্ন নিয়ে।  সেই স্বপ্নের অবস্থাও সেই রকমই যেটা ১৯৮৬/৯২ সালে ছিল।  কারণ, আমাদের নীতিগুলো কাগজ কলমে অদ্বিতীয় হলেও যখন বাস্তবায়ন করার সময় আসে তখনি আমরা তামাশা দেখি। ১৯৬৪ সালে কোঠারি কমিশন শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে এবং দেশের স্বপ্ন পূর্ণ করার স্বার্থে আমাদের জিডিপি এর ৬ শতাংশ খরচের কথা বলেন কিন্তু ৬০ বছরের মতো সময় পেরিয়ে গেলেও সেই দিকে আমরা যেতে পারিনি কারণ আমরা কাগজ কলমের উন্নয়ন দেখতে এবং শুনতে ভালোবাসি।  সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট কাট একটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মেনে নিয়েছি। গত তিন বছরের বাজেট দেখলে বোঝা যায় যে আমরা কতটা সক্রিয় আমাদের দেশকে বিশ্বের সামনে সমৃদ্ধশালী বানানোর জন্য।

সোমবার, 31 জানুয়ারী ২০২২, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দ্বারা উপস্থাপিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, জিডিপির শতাংশ হিসাবে শিক্ষার ব্যয় ছিল: ২০১৯-২০: ২.৮%, ২০২০-২১: ৩.১% (সংশোধিত অনুমান অনুযায়ী) ২০২২-২১: ৩.১% (বাজেট অনুমান অনুযায়ী) জিডিপির 6% মানদণ্ড পূরণ করতে, 2022-23-এর শিক্ষা বাজেট গত বছরের বরাদ্দের প্রায় দ্বিগুণ হওয়া উচিত ছিল।  এই দৃশ্য দেখে নিজেদের স্বপ্ন দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়


আমরা হতো কাল্পনিক উন্নয়ন বা কাল্পনিক সাকসেসে অনেকটা বিশ্বাসী। আর এই সব আমাদের জন্য স্বাভাবিক। এই সব দেখে দেখে আমরাও শিখে গেছি যে শ্রেণীকক্ষে আমাদের কি করণীয়? আমাদের কি দেখানো দরকার আর কি নয় ? দেশের বিদ্যালয় গুলোর অবস্থা সেটা নিয়ে না লিখায় ভালো কারণ সেটার ব্যাপারে হয়তো সবাই অবগত।  দেশকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য যেমন পলিসি দরকার, সেই রকমই আমাদের পলিসিকে বাস্তবায়ন করাও দরকার। পলিসি থেকে শ্রেণীকক্ষে এবং সেই শ্রেণীকক্ষে বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী শিক্ষক বাহিনীও প্রয়োজন। আর যদি আমরা কাগজ কলমের উন্নয়নে অভ্যস্তই থাকি তাহলে হয়তো শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট কমিয়ে শূন্য করে দিলেও হয়তো আমাদের স্বাভাবিক মনে হবে।